Profile Image

Muhammad Farid Hasan

Writer, Researcher & Journalist
Menu
Story Image

বিরুদ্ধ স্রোতের মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন কেবল একটি নাম নয়, কর্মগুণে তিনি হয়ে উঠেছেন একটি প্রতিষ্ঠান এবং বাংলা ভাষা-সাহিত্য ও সাংবাদিকতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর মতো শতবর্ষী কর্মময় মানুষ আমরা খুব একটা পাইনি। যতদিন বেঁচেছিলেন দু হাত ভরে নিরলস কাজ করে গেছেন। ১৮৮৮ সালো ৩ নভেম্বর তাঁর জন্ম, বর্তমান চাঁদপুর জেলার পাইকারদি গ্রামে। স্বাভাবিকভাবেই তখনকার সময়টা অগ্রসর নয়, বরং ভীষণ রকমের পশ্চাৎপদ। ওই সময়টায় সংস্কৃতির চর্চা ছিল ধর্মান্ধতার শেকলে মারাত্মকভাবে বন্দী। মুসলিম কেউ মঞ্চনাটক করলে বা দেখলে অথবা গান গাইলে গ্রামে সালিস ডেকে তার বিচার করা হতো। কুসংস্কারের কারণে ডাক্তার ডেকে রোগীর চিকিৎসা করানো হত না। চিকিৎসা চলতো মোল্লা কিংবা কবিরাজদের ঝাড়ফুঁকে। কিছু একটা হলেই জি¦নের আছর, ভূত, প্রেত আর গজবের ওপর দায় বর্তাতো। কেউ যদি আরবি বা ফার্সি ভাষা জানতেন তাকে ওইসময় শিক্ষিত ভাবা হত। অন্যদিকে মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবজ্ঞা ছিল অসীম। অনেকে মনে করতেন, বাংলা হচ্ছে হিন্দুদের ভাষা। তাই মুসলমান হয়ে হিন্দুয়ানি চর্চা ঠিক নয়। মুসলমানের ভাষা বলতে তারা আরবি ও ফার্সিকেই বুঝতেন এবং বোঝানোর চেষ্টা করতেন। তৎকালের ছেলেমেয়েরা স্কুল পর্যন্ত যেত না; কেবল দু একজন ব্যতিক্রম ছাড়া। নাসিরউদ্দীন সেই ব্যতিক্রমদের পুরোধা ছিলেন। তিনি যখন চাঁদপুরের হরিনাথ হাইস্কুলে ভর্তি হলেন, দেখা গেল স্কুলের তিনশ ছাত্রের মধ্যে মুসলমান ছিল মাত্র তিন কি চারজন।

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন এমন অনগ্রসর সমাজে কেবল জন্মই নেননি, এর মধ্য দিয়ে তিনি বেড়েও উঠেছেন। কিন্তু অন্য তরুণ-যুবকদের চেয়ে তিনি ছিলেন আলাদা। তাঁর স্বাতন্ত্রতা ছিল বিদ্রোহী ও ভাবুক সত্তায়। তিনি প্রায়ই ভাবতেন মুসলিমদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ গরিব কেন, অশিক্ষিত কেন। অথচ ওইসময় হিন্দুরা উৎসাহ নিয়ে শিক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করতো। নাসিরউদ্দীন তাদের কর্মকাণ্ড ও মুসলমানদের জীবন-যাপন পর্যবেক্ষণ করতেন নিবিড়ভাবে। ফলে তিনি খুব দ্রুতই মুসলমানদের পিছিয়ে পড়ার কারণগুলো বুঝতে সক্ষম হন। বই, ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যেস তাঁর ছিল, মঞ্চও তাঁকে টানতো। মঞ্চে হিন্দুদের সাথে অভিনয় করার কারণে একবার তাঁকে সালিসদারদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। নাসিরউদ্দীন লিখেছেন, সালিসদাররা বললেন, ‘ছিঃ ছিঃ মোছলমানের ছেলে হয়ে হিন্দুদের গান বাজনার আসরে যাওয়া? এমন শক্ত গোনার কাজ কর?...মারধোর করবো না। তবে কানে ধরে একঘণ্টা বসে থাকতে হবে। আর ভবিষ্যতের জন্য সাবধান!’ কিন্তু এতসব শেকল, ধর্মান্ধ, সমাজ, সালিসদারদের নিষেধ ও শাস্তিভয় তাঁকে দমাতে পারেনি। গোপনে তিনি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন। কুসংস্কার, মোল্লা-মৌলভীদের ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কৈশোরেই তিনি স্পষ্টভাষা আর যুক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করতেন। একবার বৈশাখী মেলায় যাওয়ার অভিযোগে তাঁকে মসজিদের ইমামের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। নাসিরউদ্দীন তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন : ‘‘ইমাম সাহেব বললেন, ‘মেলায় গেছিলে? জান, এই পহেলা বৈশাখ তারিখে হিন্দুরা ইব্রাহীম নবীকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল’। আমি বললাম, ‘ইব্রাহিম নবী তো কত হাজার বছর আগে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুর সন তারিখও কেউ বলতে পারে না।...বাংলা সন আর বৈশাখ মাস তখন ছিল না। আর বাংলাদেশের লোক আরবে যায়নি ইব্রাহিম নবীকে মারবার জন্য। আপনি ভুল বলছেন।’’ এমন কথা শুনে ইমাম সাহেব যে ভয়ানক ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কুসংস্কার আর ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে নাসিরউদ্দীনের প্রতিবাদের ঘটনা শুধু এই একটি নয়, আরো অনেক বিদ্রোহ আমরা তাঁর জীবন প্রবাহে দেখি। সমাজের যে প্রচলিত স্রোত ছিল ওইসময়, তার সম্পূর্ণ বিপরীতে নিজস্ব চিন্তা নিয়ে এগিয়ে চলাই ছিল নাসিরউদ্দীনের চরম আরাধ্য ও গন্তব্য। 

পূর্বেই বলেছি, বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন টানতো স্কুলবালক নাসিরউদ্দীনকে। একবার ম্যাগাজিন পড়তে গিয়ে তিনি তাঁর হিন্দু সহপাঠীর ভর্ৎসনার শিকার হয়েছিলেন। তাঁর সহপাঠী সুরেশ বলেছিল, ‘তোদের মোছলমানদের এরূপ তো কোনো পত্রিকা নেই। আমাদেরগুলি দেখবার এত শখ কেন? যা দেব না।’ তখন কিশোর নাসিরউদ্দীনের মনে হল সত্যিই তো, মুসলমানদের কোনো পত্রিকা নেই কেন! স্কুলে-লাইব্রেরিতে অনেক খুঁজেও তিনি মুসলমানদের লেখা বই বা কোনো পত্রিকা পেলেন না। তবে এ চিন্তা তাঁকে ভালোভাবে পেয়ে বসেছিল। এ চিন্তা বাংলার মুসলমান সমাজের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ নাসিরউদ্দীনের চিন্তার চূড়ান্ত বিকাশ ঘটলো ‘সওগাত’ প্রকাশের মাধ্যমে।

এর আগে বলে রাখা ভালো মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের প্রারম্ভ জীবন সুখের ছিল না। ম্যাট্টিক পরীক্ষার পূর্বে বাবা আবদুর রহমান প্রয়াত হলে পরিবারের ভার তাঁর ওপর বর্তায়। সংসার যাপনের জন্যে নাসিরউদ্দীন প্রথমে নরসিংহপুরে স্টিমার মাস্টারের সহকারীর কাজ নেন। তখন তাঁর বেতন ছিল বিশ টাকা। এরপর তিনি এমসি দত্ত নামের এক ভদ্রলোকের আন্তরিক সহযোগিতায় ভারতের ওরিয়েন্টাল বীমা কোম্পানির চাঁদপুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখানে কাজ করে তিনি প্রথমবারের মতো আর্থিক সচ্ছলতার সন্ধান পান। যে-তিনি ক মাস আগেও বিশ টাকা বেতনে কাজ করতেন, সেই নাসিরউদ্দীনই বীমা কোম্পানিতে এসে প্রথম মাসে তিনশ টাকা আয় করলেন। আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও বীমার কাজে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল না, তা নয়। নাসিরউদ্দীন ছিলেন চাঁদপুর অঞ্চলের প্রথম মুসলমান এজেন্ট। ওইসময় গোঁড়া মুসলমানরা মনে করতো বীমা করা হারাম, নাজায়েজ ও ইসলামবিরোধী কাজ। ফলে প্রথম প্রথম মুসলমানদের বীমা করার কথা বললে তারা নাসিরউদ্দীনকে ভর্ৎসনা করতো। নাসিরউদ্দীন তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘অবস্থাপন্ন লোক যারা, তাদের কাছে গেলেই তারা আমাকে নিন্দা করত, এ কী রকম মুসলমান! মৌলবি, পীর, মাওলানারা বলে দিয়েছেন, জীবন বীমা ও ব্যাংকের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখবে না। এ সবই গুনাগারির কাজ।’ অবশ্য খুব দ্রুতই এসব ভুল ভাঙিয়ে নাসিরউদ্দীন কণ্টকাকীর্ণ পথে কাজ করে গেছেন এবং ফলশ্রুতিতে তাঁর হাতে ধরা দিয়েছে কাক্সিক্ষত সফলতা। বীমা কোম্পানির কাজটি নাসিরউদ্দীনের পরবর্তী জীবনের জন্যে খুব অর্থবহ ছিল। এখানে কাজ করতে গিয়েই বিভিন্ন ধর্ম-পেশার রুচিশীল মানুষের সাথে তাঁর মেশার সুযোগ হয়। তাঁর চিন্তাকে শক্তিশালী করতে এ পরিবেশের ভূমিকা ছিল অনেক বেশি।

বীমার কাজ করে আর্থিক সচ্ছলতা পেলেও নাসিরউদ্দীনের মন পড়েছিল মুসলিম সমাজের দুরবস্থা ও এর থেকে উত্তোরণের চিন্তায়। তাই বিত্তের দেখা পেলেও তাঁর চিত্তের খোরাক মেটেনি। এসময় তিনি একটি লাইব্রেরি দেয়ার চিন্তা করেন। নাম ওরিয়েন্টাল লাইব্রেরি। উদ্দেশ্য ভালো বই এনে বিক্রি করে চাঁদপুরে সাহিত্যের প্রসার ঘটানো। লাইব্রেরির জন্যে মুসলিম লেখকের বই সংগ্রহ করতে তিনি প্রথমবার কোলকাতা যান। সেখানে গিয়ে দেখেন মুসলিম লেখকের লিখা তেমন কোনো বই নেই। কিছুটা হতোদ্যম হলেন স্বাভাবিকভাবেই। এর কিছুদিন পর পত্রিকা করার বাসনা তাঁর মনে আবারও উঁকি দিয়ে ওঠে। তাঁর মনে হলো, শক্তিশালী একটি পত্রিকার মাধ্যমেই সমাজের কুসংস্কার, অজ্ঞতা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনা করা যাবে। পাশাপাশি সংস্কৃতির উন্নয়ন সাধনও সম্ভব হবে। ১৯১৭ সালে পত্রিকা করার উদ্দেশ্যে নাসিরউদ্দীন চাঁদপুর থেকে বীমা কোম্পানীর কাজ বাদ দিয়ে কলকাতা যান। শত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হবে জেনেও নাসিরউদ্দীন পত্রিকা করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়াননি। 

স্বভাবতই পত্রিকা কী হবে, কেমন হবে, কী আদর্শকে লালন ও ধারণ করবে তা নিয়ে নাসিরউদ্দীনের চিন্তার শেষ ছিল না। অনেক ভেবেচিন্তে তিনি পত্রিকার নাম দিলেন ‘সওগাত’। সওগাতের ধারাবাহিক প্রকাশনা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্যে তিনি কজন পৃষ্ঠপোষক খুঁজছিলেন। প্রথমবার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পেলেন তৎকালীন জাতীয়তাবাদী নেতা ব্যারিস্টার এ রসুলকে। ব্যারিস্টার এ রসুল নাসিরউদ্দীনকে উৎসাহিত করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সওগাত প্রকাশের পূর্বেই তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে কিছুটা হতাশ হলেও আবার নতুন করে পৃষ্ঠপোষক খুঁজে নেন নাসিরউদ্দীন। 

নাসিরউদ্দীন সওগাত প্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে সপ্তনীতি নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি ঠিক করলেন সওগাতের উদ্দেশ্য হবে স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ, মুক্তবুদ্ধি চর্চা, মানসম্মত লেখা প্রকাশ, মুসলিম লেখকদের পৃষ্ঠপোষকতা, কুসংস্কার দূরীকরণে আন্দোলন পরিচালনা, মুসলমানদের ঐতিহ্য উপস্থাপন, নারী সমাজের উৎকর্ষ সাধন, তরুণ লেখক সৃষ্টি করা ইত্যাদি। উদ্দেশ্যগুলো নির্ধারণ করা সহজ হলেও বাস্তবায়নের কাজ সহজ ছিল না। সওগাত প্রকাশ করতে গিয়ে ওই সময়ের মুসলমানদের চিন্তার দীনতা নাসিরউদ্দীনের কাছে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নাসিরউদ্দীন চেয়েছিলেন সওগাতের প্রচ্ছদ, ছাপা থেকে শুরু করে সবকিছুই মুসলিমদের সংস্পর্শে হবে। কিন্তু বহু খুঁজেও তিনি সওগাতের প্রচ্ছদ করার জন্যে কোনো মুসলিম শিল্পী পেলেন না! পাবেনই বা কীভাবেÑছবি আঁকা, ছবি তোলা, ছবি প্রকাশ করাই তো বড় গোনাহের কাজ। ফলে চিত্রকলার চর্চা বন্ধ! তবে এতে নাসিরউদ্দীন দমে যাননি। ছবি আঁকা বা প্রকাশ যখন মুসলিম সমাজে ‘নাজায়েজ’, নাসিরউদ্দীন তখন ঠিক করলেন সওগাত হবে সচিত্র! শুধু মাত্র এই একটি বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলিম সমাজে সওগাত প্রকাশের চিন্তা ছিল কতটা প্রকাশ্য বিদ্রোহ। আর বিদ্রোহী ছিলেন মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। 

কেবল প্রচ্ছদ নয়, মানসম্মত লেখা পাওয়া নিয়েও নাসিরউদ্দীনকে অনিশ্চয়তায় ভুগতে হয়েছে। সওগাতের প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ করলেন গণেশ ব্যানার্জি। লেখার জন্যে নাসিরউদ্দীন প্রগতিশীল লেখকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। ধরতে গেলে কেউই তাঁকে বিরূপ করেনি। লেখা সংগ্রহ হয়ে গেলে সমস্যা দেখা দিল প্রেস নিয়ে। প্রেসের ক্ষেত্রেও মুসলমানদের প্রেস প্রথমে খোঁজা হলো। কিন্তু ছবি-কার্টুনসহ পত্রিকা ছাপানোর কোনো মুসলমানের প্রেস পাওয়া গেল না। সওগাত ছাপতে দেয়া হল কলকাতার জোড়াসাঁকোর রায় কালীপ্রসন্ন সিংহ বাহাদুরের ‘ফাইন আর্ট প্রিন্টিং সিন্ডিকেট’ প্রেসে। নাসিরউদ্দীনের শ্রম-ঘামে সওগাতের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯১৮ সালে। সওগাত প্রথম সংখ্যার প্রথম লেখাটি ছিল বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের। লিখেছেন মানকুমারী বসু, ইসমাইল হোসেন সিরাজী, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, শাহাদাত হোসেন, জলধর সেন, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, ভূজঙ্গধর রায় চৌধুরী, ও আলী প্রমুখ। সওগাত প্রথম সংখ্যায় ২৭টি রচনার মধ্যে ১৫টি লিখেছেন মুসলমান লেখক। সওগাত প্রথম সংখ্যাটি ছিল ঐতিহাসিক ও মাইলফলকে পরিপূর্ণ। সওগাতই ছিল প্রথম চিত্রবহুল মুসলমানদের পত্রিকা। কেবল তা-ই নয়, আধুনিককালে শিল্পের মান বিবেচনায় এটি বাংলার মুসলমানদের করা প্রথম সাহিত্য পত্রিকাও।

প্রথম সংখ্যা প্রকাশের পরপরই এটি সবার আলোচনায় চলে আসে। সওগাত প্রকাশের পক্ষে-বিপক্ষে নানা অভিমত ওঠে। ছবি ও কার্টুন প্রকাশের কারণে ধর্মান্ধরা বলতে শুরু করে, নাসিরউদ্দীন মুসলিম হয়ে মুসলমানদের ঐতিহ্যবিরোধী কাজ করছে। তাঁকে ইসলামবিরোধীও আখ্যা দিলেন কেউ কেউ। নাসিরউদ্দীন যথাসম্ভব মানুষের সমালোচনার জবাব দিতে চেষ্টা করেছেন। তিনি তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন, সওগাত প্রকাশের পর ফরিদপুরের বিখ্যাত পীর বাদশা মিয়া তাঁকে চিঠি লিখেন। পীরসাহেব লিখেছেন, ‘সওগাত খুব ভাল পত্রিকা হইয়াছে। কিন্তু আপনার কাগজে পুরুষ ও নারীদের ছবি ছাপার দরুণ ইহা ঘরে রাখিয়া নামাজ পড়া যায় না।’ তাঁর পত্রের জবাবে নাসিরউদ্দীন লিখেছেন, ‘আপনারা বিধর্মী রাজার ছবি অংকিত টাকার নোট ও রাজার মূর্তি খোদিত রুপার টাকা সংগে রেখে নামাজ আদায় করেন। নামাজের সময় এগুলি বাইরে রেখে আসেন না। আর আমি মুসলিম ইতিহাসের গৌরবব্যাঞ্জক ছবি ছেপে কি অপরাধ করলাম। যা হোক, আপনি ‘সওগাত’ খানা নামাজের ঘরে না রেখে অন্যত্র সরিয়ে রাখলে আর কোনো অসুবিধা হবে না।’ নাসিরউদ্দীনের যুক্তিসঙ্গত জবাবে পীরসাহেব খুশি হয়ে বার্ষিক সওগাতের গ্রাহক হয়ে যান!

সকল সমালোচনা, তীর্যক মন্তব্যের পরেও সওগাত যাঁদের প্রশংসা পেলো তা নাসিরউদ্দীনকে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করার প্রেরণা দিতে যথেষ্ট ছিল। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ সওগাত দেখে বলেছেন, ‘মুসলমান সমাজের বর্তমান অবস্থায় তাদের মধ্য থেকে যে এরূপ সুন্দর একখানা মাসিক পত্রিকা বের হতে পারে আমার ধারণা ছিল না। আজ পর্যন্ত তোমাদের এ ধরনের কোনো মাসিক পত্রিকা আমার হাতে আসেনি।’ প্রায়ই একই কথা বলেছেন আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ। তিনি সওগাত পড়ে মন্তব্য করেছেন : ‘সওগাতের পূর্বে মুসলমানদের এরূপ সুন্দর সুসজ্জিত মাসিক পত্রিকা আমি আর দেখিনি।’

সওগাত বাংলা সাহিত্যের যুগ সৃষ্টিকারী পত্রিকা। কিন্তু সওগাত প্রকাশনার পথ মসৃণ হয়নি। সওগাতের সমকালে অনেক পত্রিকা থাকলে সেগুলো নানা কারণে দীর্ঘায়ূ পায়নি। অন্যদিকে সওগাতের যাত্রাও আর্থিক সঙ্কটমুক্ত ছিল না। সওগাত প্রথম তিনবছর নিরবচ্ছিন্নভাবে চলল। কিন্তু ততদিনে লোকসান দিতে দিতে নাসিরউদ্দীনের সঞ্চিত অর্থভাণ্ডার শেষ। উল্টো তিন বছরের কয়েক হাজার টাকা ঋণী হলেন। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ী ও অন্যদের টাকা দিতে না পারার কারণে তাঁর নামে আদালতে নালিশও করা হয়। অর্থের জোগান দিতে নাসিরউদ্দীন সওগাত প্রকাশনায় খানিক বিরতি দিয়ে আবার ফিরে গেলেন বীমা কোম্পানির কাজে। ফলে ১৯২১ সালে সওগাতের প্রকাশনা প্রথমবারের মত বন্ধ হয়। ১৯২৬ সালে আবার প্রকাশিত হলো সওগাত। প্রথম পর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে নাসিরউদ্দীন বুঝতে পেরেছিলেন কুসংস্কার ও রক্ষণশীলতার গণ্ডি ভাঙতে হলে প্রয়োজন তারুণ্যের শক্তি। এ লক্ষ্য নিয়ে তিনি সওগাতের দ্বিতীয় পর্যায়ে গঠন করলেন ‘তরুণ দল’। এ দলে ছিলেন মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী, আবুল মনসুর আহমদ, সৈয়দ আবুল হোসেন, আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, ডাঃ মোহাম্মদ লুৎফর রহমান প্রমুখ। এ দল গড়ার উদ্দেশ্য হল স্বাধীন মত প্রকাশ, যুক্তির নিরিখে সমাজকে দেখা এবং সংকীর্ণতাকে পদদলিত করা। তরুণরা সওগাতে মুক্তভাবে তাঁদের মতামত লিখতেন ধর্মীয় গোঁড়ামি আর অপব্যবহারের বিরুদ্ধে। এ সময় তরুণদের লেখা ‘মোল্লা-সমাজ’, ‘ধর্ম বাঁচবে কি?’, ‘বাংলায় পীর পূজা’, ‘ধর্ম-জীবনে অজ্ঞতা ও কুসংস্কার’, ‘মুসলিম সমাজে ভিক্ষুক সমস্যা’, ‘ইসলামে পরমতসহিষ্ণুতা’, ‘ইসলাম ও সভ্যতা’, ‘ঈশ্বর শব্দের ব্যবহার’সহ অসংখ্য প্রবন্ধ, নিবন্ধ সওগাতে প্রকাশিত হয়। প্রগতিশীলতার জন্যে হত্যার হুমকিও দেয়া হয় নাসিরউদ্দীনকে। কিন্তু তিনি তাঁর চিন্তা ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বরাবর অনঢ় ছিলেন। নাসিরউদ্দীন ‘বাংলা সাহিত্যে সওগাত যুগ’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘সেই যুগে প্রতিক্রিয়াশীল দলের লোকেরা ছবি ছাপার জন্য আমার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত-প্রায় হয়ে ওঠেন। এমন কি তারা আমাকে মুসলমান বলতেও নারাজ হলেন। মহিলাদের ছবি ছাপার জন্য আমার জীবনের উপর হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও গোঁড়াদের দ্বারা আক্রান্ত হবার আশংকায় আমি অনেক সময় সতর্ক হয়ে রাস্তায় চলাফেরা করতাম।’ ১৯৫০ সালে আবারও সওগাত প্রকাশনা বন্ধ হয়। ১৯৫২ সালে সওগাত প্রকাশিত হয় ঢাকা থেকে।

এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন, সওগাত প্রকাশের পূর্বে ‘মোহাম্মদী’ ও ‘হানাফী’ প্রকাশিত হত। এ দুটি পত্রিকা সাহিত্যের নয়, এতে কোনো গল্প-কবিতা ছাপা হতো না। যা ছাপা হতো তা নিরেট সাম্প্রদায়িক বিষয়-আশয়। ফলে প্রচলিত স্রোতের বিরুদ্ধে চলতে শুরু করা অসাম্প্রদায়িক নাসিরউদ্দীন সম্পাদিত সওগাত অনিবার্যভাবে ‘মোহাম্মদী’ ও ‘হানাফী’র আক্রমণের শিকার হয়। এ দুটি পত্রিকায় নিয়মিত সওগাত গোষ্ঠীকে আক্রমণ করে লেখা হত। কখনো সেখানে বলা হত সওগাতের কারণে ইসলাম বিপন্ন হতে চলেছে। কখনো ফতোয়া দিয়ে বলা হত সওগাতের লেখকরা কাফের! মোহাম্মদী সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ এই অপপ্রচার ও বিষেদগারের অগ্রভাগে ছিলেন। তিনি ইসলাম বাঁচাতে ‘সওগাত গোষ্ঠী’কে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে মোহাম্মদীর মাধ্যমে আহ্বানও করেছিলেন। সওগাতকে নিয়ে মোহাম্মদীতে প্রকাশিত বিষেদগারমূলক লেখার যৌক্তিক জবাব দিতেন সওগাতের লেখকগোষ্ঠী। আকরম খাঁ কেবল লেখনির মাধ্যমে নয়, ব্যক্তিগতভাবেও মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও সওগাতকে নানাভাবে হেনস্থা, অপদস্থ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। চক্রান্ত করে আদালতের মাধ্যমে সওগাত প্রেস ক্রোক করার চেষ্টা, সওগাতের সভা-সমিতির পণ্ড করার ঘটনাও ঘটিয়েছেন মওলানা আকরম খাঁ। নাসিরউদ্দীনের ভাষায়, মওলানা ‘হিতাহিত জ্ঞানশূন্য’ হয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার ও প্রতিহিংসার আগুনে সওগাত-যাত্রাকে দমন করতে চেয়েছেন। অথচ পরবর্তীতে চিন্তার উৎকর্ষের সাথে সাথে মুসলমানরা বুঝতে পেরেছে যে, নাসিরউদ্দীন ও সওগাত মুসলমানদের শিল্পজাগরণে কতটা অর্থবহ ও যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে।

গল্প-কবিতা লেখা যে সমাজে ধর্মীয় অপরাধ, সে-সমাজে লেখকগোষ্ঠী তৈরি করা দুঃসাধ্য কাজ। নাসিরউদ্দীন সওগাতের মাধ্যমে মুসলিম লেখক গোষ্ঠী তৈরি করলেন। লেখকদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠার পথকে সহজ করেছেন। শুধু তাই নয়, লেখক-কবিদের সুখে-দুখে অভিভাবকের ভূমিকায়ও আমরা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনকে দেখেছি। বিপদের সময় অনেকেই নাসিরউদ্দীনের পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন। স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিষ্ঠা সওগাতের হাত ধরে। নজরুলের জন্যে নাসিরউদ্দীনকে কম সংগ্রাম করতে হয়নি। নজরুল তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু এও সত্য তাঁর নিন্দুকের সংখ্যা কম ছিল না। নাসিরউদ্দীন সবসময়ই নজরুলের পাশে ছিলেন এবং তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। প্রাচীনপন্থীরা নজরুলকে কাফের ও তাঁর লেখাকে অনৈসলামিক প্রমাণ করতে অযৌক্তিক ভাষায় যেভাবে আক্রমণ করলো, নাসিরউদ্দীন তাঁকে পৃষ্ঠপোষকতা করার কারণে তিনিও প্রায় একই ধরনের আক্রমণের শিকার হলেন। সেসময় নজরুলের কারণে সওগাতের আসর জমে উঠেছিল এবং প্রগতিশীল তরুণদের ভিত শক্ত হয়েছিল। একারণে প্রাচীনপন্থীরা ভাবলো নজরুলকে জব্দ করা হলে সওগাত গোষ্ঠীও জব্দ হবে। নাসিরউদ্দীন লিখেছেন, ‘‘যাঁরা মুসলমানদের মধ্যে প্রাচীনপন্থী ধারার লেখক-কবি ছিলেন, তাঁরা ভেবে বসলেন যে, আমাদের গোষ্ঠীটা যদি দাঁড়িয়ে যায়, তাদের পায়ের নিচের মাটি যদি শক্ত হয়ে যায়, তাহলে তাদের অর্থাৎ রক্ষণশীল তথা প্রাচীনপন্থীদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে নাÑআমাদের তাদের আক্রমণ করার এটাই ছিল মূল কারণ।’’ কিন্তু কারো কোন আক্রমণেই নাসিরউদ্দীন বিপন্ন বোধ করেননি। 
নাসিরউদ্দীনের অন্যতম সাফল্য নারী জাগরণ, নারী লেখক সৃষ্টি এবং তাদেরকে সঙ্কীর্ণ পরিসর থেকে বের করে এনে বৃহৎ পরিসরের সন্ধান দেয়া। যে যুগে নারী শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বাংলা ভাষা চর্চা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল সে যুগে সওগাত প্রারম্ভ সংখ্যার লেখা শুরু হল বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের কবিতা দিয়ে। প্রথম সংখ্যায় লিখেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভ্রাতুষ্পুত্রী মানকুমারী বসু। নারীদের লেখা নিয়ে ১৩৩৬ সনের ভাদ্র মাসে সওগাতের প্রথম মহিলা সংখ্যা প্রকাশিত হয়। কেবল সওগাতের নয়, এটি বাংলা সাহিত্য সাময়িকীর ক্ষেত্রে প্রথম কোনো নারী সংখ্যা। ওই সময়টায় নারীরা স্বামীর নাম পর্যন্ত মুখে নিতেন না। অন্যদিকে বিশ্বাস করতেন, স্বামী স্ত্রীর শরীরের যে স্থানে আঘাত করবে সে-স্থান বেহেশতে যাবে! এভাবেই নারী নির্যাতনকে সমাজ ব্যবস্থায় বৈধতা দেয়া হয়েছিল। নারীদের বিদ্যালয়ে গমন ছিল শরীয়তবিরোধী। শুরু থেকেই সওগাতের মাধ্যমে নাসিরউদ্দীন বাংলার নিগৃহীত, অবহেলিত নারীদের জাগ্রত করতে চেষ্টা করেছেন। সওগাতের একসময়ের স্লোগান ছিল ‘নারী না জাগলে জাতি জাগবে না’। তিনি সওগাতে ইসলামে নারীর সম্মান, অধিকার, ইসলামের প্রাথমিক যুগে নারী, গৌরবের যুগে মুসলিম নারী প্রভৃতি প্রবন্ধ প্রকাশ করে নারীদের সচেতন করার প্রয়াস চালান। একদিকে সওগাতে যেমন নারীদের শিক্ষা, অধিকার, সংস্কৃতি চর্চার আন্দোলন চলতো, তেমনি অন্যদিকে ধর্মের নামে নির্যাতন, পর্দার নামে অবরোধ, সংস্কারের নামে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল সওগাত। বেগম রোকেয়া সেজন্যে সবসময়ই মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনকে অভিনন্দন জানাতেন। নাসিরউদ্দীন সওগাতে নারীদের রচনা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করতেন। কবি সুফিয়া কামালের সৃষ্টি ও প্রতিভা বিকশিত হতে পেরেছিল সওগাতের কারণেই। সওগাত প্রকাশিত না হলে হয়তো আমরা সুফিয়া কামালকে কবি হিসেবে পেতাম না। তিনি ও তাঁর কর্ম থেকে যেতো গোপনে, অযত্ন ও অবহেলায়। কেবল সুফিয়া কামাল নন, সওগাতের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন এমন নারী লেখকের সংখ্যা কম নয়। নারীদের কথা বিবেচনা করেই নাসিরউদ্দীন সচিত্র মহিলা সওগাত প্রকাশের উদ্যোগ নেন। এছাড়াও নারীদের উৎকর্ষের জন্যে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের ঐতিহাসিক সংযোজন ছিল ‘বেগম’। এ পত্রিকাটি উপমহাদেশের নারীদের প্রগতিশীল করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। আজকে শিল্প-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নারীদের যে অগ্রগতি তার পেছনে নাসিরউদ্দীন, সওগাত ও বেগম পত্রিকার অবদান অস্বীকারের সুযোগ নেই। 

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন একা কুপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে সেসময় অটল পর্বত হয়ে যে সাহস প্রদর্শন করেছেন তা বিস্ময়কর। তাঁকে নিয়ে সওগাত অফিসে মজা করে লেখকরা গাইতেন, ‘মরি হায় কলিকাতা কেবল ভুলে ভরা,/ঘাড়ের উপর এতবড় শির,/নাম রেখেছে তার নাসির।/মরি হায় কলিকাতা কেবল ভুলে ভরা।’ তাঁরা মিথ্যে গাইতেন না, নাসিরউদ্দীনের শির এত বড় না হলে তিনি অসংখ্য প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে এভাবে মাথা উঁচু করে থাকতে পারতেন না। এ উপমহাদেশে আধুনিককালে মুসলমানদের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ, নারী শিক্ষা এবং কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা দূরীকরণে তাঁর ভূমিকা কিংবদন্তীতুল্য। কাজী নজরুল ইসলামের হৃদয়হীন সমালোচকরা যেমন একটা সময় মেনে নিয়েছিলেন তাঁর মাহাত্ম্য, তেমনি নাসিরউদ্দীনের অনেক নির্দয় সমালোচকও শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন। নাসিরউদ্দীন ছাত্রাবস্থায় পড়ার জন্যে মুসলমানদের কোনো পত্রিকা-ম্যাগাজিন পাননি, অথচ তাঁর আজীবন সাধনায়, অকুতোভয় প্রচেষ্টায় তিনি মুসলমানদের জাগরণ, সাংস্কৃতিক উত্তরণ, সাহিত্যে উৎকর্ষ সাধনে সক্ষম হয়েছেন। তিনি সওগাতের মাধ্যমে যে বীজ বপন করেছিলেন তা আজ শত-সহস্র ফুলে-ফলে বিকশিত হয়ে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করে চলছে। কিংবদন্তী কীতির্মান এ মানুষটির প্রতি আমাদের নিরন্তর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।


তথ্যসূত্র :
১। বাংলা সাহিত্যে সওগাত যুগ : মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন
২। সওগাত প্রকাশের নেপথ্যে স্মৃতিকথা : মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন
৩। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ও সওগাত যুগ : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
৪। নজরুল ও নাসিরউদ্দীন স্মারক-গ্রন্থ
৫। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের সাক্ষাৎকার : প্রতিচিন্তা, এপ্রিল ২০১৭
৬। শতবর্ষ পরও সমান প্রাসঙ্গিক : নাসিম-এ-আলম : আনন্দবাজার, ২৯ আগস্ট ২০১৮
 
* সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সম্পর্কে যারা জানতে আগ্রহী তারা কাদের পলাশ ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসান সম্পাদিত, পাঞ্জেরি পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত ‘বিরুদ্ধ স্রোতের মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন’ বইটি পড়তে পারেন। 

* রকমারি ডটকমে বইটির সূচিপত্র দেখুন : https://www.rokomari.com/book/194234/biroddhu-sroter-mohammod-nasiruddin