Profile Image

Muhammad Farid Hasan

Writer, Researcher & Journalist
Menu
Story Image

ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা

ঘোর অমাবস্যায় কবরস্থানে যে নিখাদ শূন্যতা থাকে, তার ভেতর অখণ্ড নিরবতা নিয়ে বসে আছেন বাবা আলাদীন। এই অভিশপ্ত মধ্যরাতে তার সামনে জোড় কবরের ওপর ছয়জন মানুষ বসা। দুর্ভেদ্য অন্ধকার আর জমাট পরিবেশের মুখে দাঁড়িয়ে স্বভাবতই আতঙ্কে সব চুপ হয়ে আছে। প্রতিটি সেকেন্ডকে মনে হচ্ছে মিনিট,  মিনিটকে মনে হচ্ছে কচ্ছপের পিঠে পার হওয়া ঘণ্টা। প্রতিক্ষণে নিখাদ শূন্যতা হু-হু করে বাড়ে। বাবা কোনো কথা বলছেন না। অথচ সবাই ভীত-স্বন্তস্ত্র হয়ে তার কথা শোনার অপেক্ষা করছে। আরো বহুক্ষণ ছোপ-ছোপ অন্ধকারে পার হয়। অবশেষে বাবার গুরুগম্ভীর কণ্ঠ শোনা যায়, মনে হয় মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গহীন থেকে কেউ কথা বলছেন। উপস্থিত সবার কান উদগ্রীব হয়ে আছে। মাত্র তিনমিনিটে বাবার কথা শেষ হয়। তার কথা শুনে দুজন মুষড়ে পড়ে, বাকিরা জানতে পারে সামনেই রয়েছে শুভদিন। আরো কিছুক্ষণ কাটে, তারপর দূরে একটি লাইট জ¦লে উঠলে আগন্তুকরা তাদের সামনে কাউকেই দেখতে পায় না। বাবা যে কখন প্রস্থান করেছেন, কেউই টের পায়নি! 
‘বাবা আলাদীন’ নামটি প্রতিদিন বহু মানুষের মুখে মুখে ফেরে। অথচ তার কণ্ঠ খুব অল্পসংখ্যকই শুনেছে কেবল, কিন্তু তাকে কেউ কখনো দেখেনি। তিনি এমনই এক ভবিষ্যৎ-দ্রষ্টাÑএ পর্যন্ত যা বলেছেন তা অক্ষরে-অক্ষরে ফলেছে। যদি কাউকে বলেছেন, ব্যবসায় ক্ষতি আসন্নÑসপ্তাহও পার হয়নি, দেখা গেছে সেই ব্যবসায়ী পথে বসে গেছেন। কাউকে বলেছেন, চারপাশে শত্রুরা ঘুরঘুর করছেÑকয়েকদিন পর তাকে ভর্তি হতে হয়েছে হাসপাতালে। বাবা যখন যেমন ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, তা-ই সত্য হয়েছে। সব সমস্যার সমাধানও তার কাছে আছে। ফলে অসংখ্য আগ্রহী মানুষ প্রতিনিয়ত বাবা আলাদীনের খোঁজ করেন। সবারই সমস্যা আছে কম-বেশি, যেভাবেই হোক এর একটা বিহিত করা চাই-ই চাই। কিন্তু বাবা আলাদীনকে কেউ কোথায় পাবে? তার না আস্তানা আছে, না দরগা, কিংবা এমন কোনো খাদেম নেই যে বলে দিতে পারে তিনি কোথায় থাকেন! তাই চাইলেই তাকে পাওয়া যায় না। মানুষ তবু হাল ছাড়ে না। কারণ, বাবা কোনো না কোনোভাবে বিশ্বাসীদের দেখা দেন।

দুই.
পেশায় রহমান হাবিব সাংবাদিক, অপরাধ বিষয়ে বিশবছর কাজ করছেন। বাবা আলাদীনের জনশ্রুতি তাকে খুব হাসাতো। ভণ্ড পীর, কবিরাজ, তান্ত্রিক, জ্যোতিষ জীবনে কম দেখেননি। সবাই অলৌকিক ক্ষমতার নামে মানুষের চোখে ধুলো দেয়, প্রতারণা করে। তারা বলে, মানুষকে ধনী করার অদ্ভুত ক্ষমতা তাদের আছে, কিন্তু তারা নিজেরাই কখনো ধনী হতে পারে না। আবার বহুলোককে স্ত্রী বশীকরণ তাবিজ দিলেও খোঁজ নিলে জানা যাবে, ভণ্ড বাবার নিজেরই স্ত্রী চলে গেছে, সংসার টিকেনি। রহমান হাবিব এসব দেখতে দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু একটা সময় তিনি লক্ষ্য করলেন, বাবা আলাদীনের বিষয়টি কেমন যেন আলাদা। প্রত্যেক ভণ্ড বাবারই নিজস্ব আস্তানা থাকে। এখন এসিরুমেও সর্বজ্ঞানী জ্যোতিষরা জটিল রোগ, কঠিন সমস্যার সমাধান করেন। এদের কেউই নিজেকে গোপন করে না। বরং পোস্টার লিফলেট লাগিয়ে আস্তানা আর নিজের অলৌকিক ক্ষমতার প্রচার করে। আস্তানায় যত বেশি লোক আসবে, ততই তার প্রতারণার ব্যবসা জমবে। অথচ বাবা আলাদীন একদম উল্টো। তিনি নিজের প্রচার করেন না, তাকে কেউ কখনো দেখেওনি। আবার কেউ তাকে সহজে খুঁজে পাক সেই ব্যবস্থাও তিনি করেননি। এ রহস্যটিই বাবা আলাদীন সম্পর্কে রহমান হাবিবকে আগ্রহী করে তোলে। ফলে তিনিও বহু চেষ্টা করেছেন, কিন্তু আলাদীনের দেখা পাননি। 
একসময় ব্যাপারটা প্রায় ভুলতে বসেছিলেন। কিন্তু শ্যালিকা রেহনুমার একটি দুর্ঘটনায় তার কথা আবার মনে পড়ে। রেহনুমা বসুন্ধরা যাচ্ছিলো, হঠাৎই সড়ক দুর্ঘটনাÑতার ডান পা ভেঙে গেছে। যেভাবে গাড়িটা এসে ধাক্কা দিয়েছে, মারাও যেতে পারতেন। তাকে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হলো। রহমান হাবিব দেখতে গিয়েছিলেন। কথায় কথায় রেহনুমা বললো, বাবা আলাদীন তাকে নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। তার কথাই সত্যি হলো। অথচ রেহনুমা বাবার কথা বিশ্বাস করেনি। বিশ্বাস করলে হয়তো দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পারতো। রহমান হাবিব রেহনুমার কথা শোনে, আর অবাক হয়। জানতে চান কীভাবে আলাদীনের দেখা পেয়েছে? রেহনুমা শরীরে অসংখ্য ব্যথা নিয়েও হাসে। বলে, তা বলা যাবে না। বাবার নিষেধ আছে। যদি বলি অভিশপ্ত হবো!
কথাটা শুনে চারদিকে কেমন ঘোর তৈরি হয়। রেহনুমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানের ছাত্রী, রেজাল্টও ভালো ছিল। সে আলাদীনের কথা বলতে চায় না অভিশপ্ত হওয়ার ভয়ে! রহমান হাবিবের বিশ্বাস হতে চায় না কথাটা। তবু আবার বলে, আমাকে বলতে পারো, কারণ বাবার সঙ্গে আমিও দেখা করতে চাই। শুনে রেহনুমা মন খারাপ করেছে। বলেছে, বাবা আলাদীনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে একদিন এমনিতেই দেখা হয়ে যাবে। বাবা-ই সব ব্যবস্থা করবেন! তিনি কোথাও থাকেন না! তাকে কেউ দেখতেও পায় না। রহমান হাবিব আরো কিছু সময় থেকে বাসায় ফিরে আসেন। কিন্তু আলাদীনের কথাটা মন থেকে মুছতে পারেন না। হঠাৎ তার মনে পড়ে, রেহনুমাকে একটি প্রশ্ন করা হয়নি বাবাকে সে কোনো টাকা-পয়সা দিয়েছিল কি না?

তিন.
পরেরদিন থেকে রহমান হাবিবের একটাই কাজÑবাবা আলাদীনকে খুঁজে বের করা। যারা যারা তার সাক্ষাৎ পেয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। অনেকের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তাকে একজন জানিয়েছেন, কবরস্থানে বাবার সাক্ষাৎ পেয়েছেন তিনি। তাও অমাবস্যা-রাতে। বাবার কণ্ঠ খুব ভারী। তাকে বলেছিলেন, সামনে বিপদ আসন্ন। তার বাসায় শত্রুরা আগুন দিতে পারে। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেনি। তার তো কারো সঙ্গে শত্রুতা নেই। অথচ সত্যিই তার বাসায় আগুন লেগেছিল। এখন তিনি আবার বাবার সাক্ষাৎ পেতে চায়। কিন্তু পায়নি। বংশালের এক শিল্পপতির কথা শুনে রহমান হাবিব ভীষণ চমকে যান। বাবা আলাদীন তাকে বলেছিলেন, ব্যবসায়ে প্রচুর লাভ হচ্ছে, এতে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ তার বড় ছেলে যে কোনো মুহূর্তে মারা যেতে পারে। শিল্পপতি আতঙ্কিত হয়ে বাবার কাছে প্রতিকার চেয়েছিলেন। বাবা অদ্ভুত সমাধান দিলেন। শিল্পপতিকে বললেন, কালো ব্যাগে দশ লাখ টাকা নিয়ে অমাবস্যা রাতে পাড়ার কবরস্থানে যেতে হবে। শেষ কবরটার কাছে একটি বস্তা, কেরোসিনের বোতল, দুটি মাথার খুলি, একটি ম্যাচ থাকবে। বস্তায় টাকার ব্যাগ ও একটি মাথার খুলি ঢুকিয়ে শক্ত করে বাঁধতে হবে। তারপর ঢালতে হবে কোরোসিন। এরপর ম্যাচ ও আরেকটি মাথার খুলি নিয়ে কবরস্থানের চারপাশে তিনবার চক্কর দিতে হবে। চক্কর শেষ হলে বস্তায় আগুন ধরিয়ে দিতে হবে। তারপর আবার তিনচক্কর। বস্তাটি পোড়ার পর যে ছাই হবে, সেই ছাই থেকে একমুঠ নিয়ে বাসার সামনে, বড় ছেলের বিছানার নিচে ছিটাতে হবে। পোড়ানো টাকার ছাই হলো সন্তানের প্রাণের ছদকা! বাবা আলাদীন যেভাবে বলেছিলেন, শিল্পপতি তা-ই করেছিলেন। তার ছেলে ভালো আছে। ব্যবসাও দিন দিন আরো ভালো হচ্ছে।
রহমান হাবিব কেন, যে কেউ এ ঘটনায় বিস্মিত হবে। দশ লাখ টাকা ব্যাগে করে পোড়াতে হবে! তাহলেই সমস্যার সমাধান। অবাক না হয়ে পারা যায়? রহমান হাবিব ভাবতে থাকেন, ভাবতে থাকেন। টাকা পোড়ানো কেন হলো? একবার তার মনে হলো, শিল্পপতি যখন কবরস্থানে চক্কর দিচ্ছিলেন, তখন হয়তো বাবার লোকজন টাকার ব্যাগ সরিয়ে অন্য ব্যাগ রেখে দিয়েছে। কিন্তু এটা করাও কষ্টকর। তবু কত কিছুই তো হতে পারে!

চার.
চারদিকে ঘোর অন্ধকার। ঝিঁঝিঁর ডাক শোনা যাচ্ছে। দূরে একটি কুকুর ডাকছে। রহমান হাবিব ধড়পড় করে জেগে উঠলেন। চোখ খুলে কিছুই দেখতে পেলেন না। মাথাটা ভীষণ ঝিমঝিম করছে। মনে হচ্ছে ছিঁড়ে পড়বে। কোথায় আছেন তিনি? তার জেগে ওঠা কেউ যেন টের পেলো। কোমল কণ্ঠে বললো, ভয়ের কিছু নেই রহমান সাহেব। আপনার পাশে আরো তিনজন বসে আছেন। আরেকটু পর আপনাদের সঙ্গে বাবা আলাদীন সাক্ষাৎ করবেন। ভয়ের কিছু নেই, শান্ত থাকুন। আপনারাই তো তার সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছুক ছিলেন। 
রহমান হাবিব কিছু বলতে চাইলেন। কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না। গলার ভেতর কী যেন আটকে আছে। নিরুপায় হয়ে পকেটে হাত দিলেন, পকেট খালি। মোবাইলটাও নেই। প্রচণ্ড ভয় লাগছে। ততক্ষণে অসংখ্য প্রশ্ন মাথার ভেতর ঘুরতে শুরু করেছে। প্রথম যে প্রশ্নটি মনে এলো, তিনি কীভাবে এখানে এলেন? মাথা ঝিমঝিম কিছুটা কমেছে। ক্রমশই আবছা আবছা স্মৃতি ফিরে আসে যেন। মনে পড়ে, অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। বাসার কাছে আসতেই একজনের সঙ্গে দেখা। অচেনা মানুষটি তাকে নাম ধরে ডাকলো। তাকে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, তার আগেই একটি গোলাপ তার নাক স্পর্শ করে মাটিতে পড়লো। আর কিছু মনে নেই। আরো কিছু ভাবতে যাবেন, তার পূর্বেই কণ্ঠটা আবার শোনা গেলো, দশমিনিটের মধ্যে বাবা আসবেন। স্থির থাকুন সকলে। বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষ হলে আপনারা বাসায় ফিরে যাবেন। আপনাদের মোবাইল, মানিব্যাগ গেটের কাছে পাবেন। শান্ত থাকুন...শান্ত...। কোমল কণ্ঠটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলো। মনে হলো, চলেই গেলো।
এরপর কতক্ষণ কাটলো রহমান হাবিবের মনে নেই। কেউ যে এলো তাও টের পেলেন না। হঠাৎ ভারীকণ্ঠে কান স্তব্ধ হয়ে গেল। বাবা আলাদীন! বাবা প্রথমে তিনজনের কথা শুনলেন। দুজনেরই সুসংবাদ। সবকিছু ঠিক আছে। চাকুরিতে প্রমোশন পাবে। একজনের ভাগ্যরেখায় সমস্যা। ক’মাস পরে তার স্ত্রী সন্তানের জন্ম দিবে। মাতৃগর্ভে শিশুটির চারপাশে যমদূত ঘুরছে। মারা যেতে পারে। লোকটা ক্ষীণকণ্ঠে সমাধান চাইলো। বাবা আলাদীন পরের অমাবস্যায় তাকে স্ত্রীর শাড়ি, গহনার চারভাগের একভাগ এবং ১ লাখ টাকা পোড়ানোর কথা বললেন। সবশেষে বাবা রহমান হাবিবের নাম ধরে ডাকলেন। বললেন, তোর কপালে অনেক বিপদরে টুনু। তোর গ্রামে বিপদ, স্ত্রী-সন্তানের বিপদ। রহমান হাবিব বিস্ময়ে ডুবে যেতে থাকলেন। টুনু নামটা এ শহরের কেউ জানে না। কেউ না। তাকে এ নামে বাবা ডাকতেন। তিনি নেই পনের বছর। কাজেই মাথা ঘুরতে লাগলো। কোনো রকম করে বললেন, আমি কী করবো? এর সমাধান কী? বাবা আলাদীন শীতলস্বরে বললেন, এর সমাধান নেইরে টুনু। এই তোর কর্মফল, এই তোর শাস্তি। আমাকে অবিশ্বাস করিস! রহমান হাবিব অস্পষ্টভাবে কী কী বললেন। আরো কিছুক্ষণ কাটলো। শূন্যতা... অন্ধকারের ভেতর বাবা আছেন কি না কেউই বুঝতে পারেন না। 
খানিক দূরে কয়েকটি মোমবাতি জ্বলে উঠলো। এতে অন্ধকার দূর হলো না, কিন্তু আবছা আবছা দেখা যায়। রহমান হাবিব চারপাশে তাকালেন। তিনি ছাড়া কেউ নেই। মাটির দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলেন। একটি ভগ্ন কবরের ওপর বসে আছেন তিনি! আতঙ্কে নীল হয়ে মোমবাতিগুলোর দিকে ছোটেন। কাছে আসতেই চোখে পড়ে, মাটিতে পড়ে আছে তার মোবাইল ফোন আর মানিব্যাগ। একমিনিটও দেরি করলেন না। মোবাইলের লাইট জে¦লে রাস্তা দিয়ে জোরে হাঁটা শুরু করলেন। এখনো জানেন না তিনি কোথায় আছেন। গলি পার হতেই সবকিছু চেনা মনে হয়। এ তো পাড়ার কবরস্থান! তার বাসা থেকে দশ মিনিট দূরত্বের! দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বাসায় পৌঁছেন। ঘুম পাচ্ছে খুব। সম্ভবত নেশাজাতীয় কিছু তাকে দেয়া হয়েছে। ঘুমাতে ঘুমাতে ভাবছেন, সকালে গিয়ে কবরস্থানটা ভালো করে দেখতে হবে। 

পাঁচ.
এরপর বহুদিন কেটেছে। সপ্তাহ, মাস, তিনমাস। কিন্তু কিছুই ঘটেনি। রহমান হাবিব প্রথমদিকে বেশ চিন্তিত ছিলেন। সে চিন্তা এখন আর নেই। এদিকে অফিসের ব্যস্ততাও বেড়েছে অনেক। আজ সকাল সকাল অফিসে এসেছেন। বড় ক্রাইম ঘটেছে। এক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি। রহমান হাবিব এই নিউজ নিয়ে ব্যস্ত। সকাল গড়িয়ে দুপুর, তারপর বিকেল। কাজ শেষ হয় না। এরমধ্যে হঠাৎই মোবাইল বেজে উঠলো। গ্রাম থেকে বড় চাচার কল। রিসিভ করতেই চাচার উদ্বিগ্ন স্বর-- টুনু তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়। তোদের ঘরে আগুন লাগছে।... তোর বউ আর বাচ্চাকে হাসপাতালে নিচ্ছি। তাড়াতাড়ি আয়...। বাচ্চার অবস্থাটা ভালো না। রহমান হাবিব মুহূর্তেই চোখে অন্ধকার দেখলেন। পৃথিবীটা টলে ওঠে যেন। তখনই যেন কানের কাছে বাবা আলাদীনের শীতল কণ্ঠ বেজে উঠলো। সঙ্গে ভুবন কাঁপানো হাসি!

ছয়.
অভিজাত একটি হোটেলের ভিআইপি রুমে দুজন মানুষ বসে আছে। সামনে একটি টি-টেবিল, তার ওপর হুইস্কির বোতল। হালকা অন্ধকারেও একজনের উদ্বিগ্নতা বোঝা যাচ্ছে। এসিতেও রীতিমতো ঘামছে সে। অন্যজন শান্ত, হুইস্কি খাচ্ছে। প্রথমজন বললো, খবর আসছে একটু আগে ছোট মেয়েটা মারা গেছে। বউটা ঠিক আছে। অপরজন শীতলকণ্ঠে বললেন, কোনো কাজ ঠিক হয় না তোর। বলেছি, হালকা শিক্ষা দিবো। অল্প অল্প হবে সব কিছু। প্রথমজন মাথা নিচু করে রইলো, বললো আমি পেট্টোল অল্পই দিতে বলেছি। কামরান, ইউনুস ভেবেছে আগুন লাগলে সবাই বের হয়ে যাবে। কিন্তু বাচ্চাটা ঘুমে ছিল। এ কথা শুনে অপরজন শাসায়, চুপ কর। কথা বলবি না হারামজাদা। কতক্ষণ চুপচাপ। তারপর বলে, আগামী তিন অমাবস্যা কাজ হবে না। সব বন্ধ। সবাইকে সাবধানে থাকতে বল। দ্বিতীয়জন রুম থেকে বের হয়ে যায়।

সাত.
হাসপাতালের বারান্দায় রহমান হাবিব দাঁড়ানো। তিনি কি বেঁচে আছেন, না মরে গেছেন-- নিজেই টের পাচ্ছেন না। তার সামনে আগুনে বিক্ষত শিশুর লাশ!
তখন দূরে পুলিশের একটি গাড়ি ছুটে চলেছে। গন্তব্য আপাতত জানে না কেউ। সামান্য আলোর রেখা দেখেই ছুটছেন তারা।